
প্রকাশিত: Fri, Aug 11, 2023 11:05 PM আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 4:08 AM
বেচারা মুজিব বড় ভাগ্যবান ছিলেন
শামসুদ্দিন পেয়ারা
শেখ মুজিব বাঙলাদেশের স্বাধীনতা চান নাই। বাঙলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন বুচার অব বেঙ্গল জেনারেল ইয়াহিয়া খান, নরমাংসাশী টিক্কা খান, মানবরূপী শয়তান রাও ফরমান আলী, আয়ুবভৃত্য মোনেম খান, গভর্ণর এম এ মালেক (ঠ্যাডা মালেইক্কা) ও গলাকাটা গোলাম আজম। পক্ষান্তরে মুজিব চেয়েছিলেন যে কোনো মূল্যে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করতে ও বাঙলাদেশকে পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে অটুট রাখতে।
পাকিস্তানের ঐক্য অক্ষুন্ন রাখার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই ১৯৬৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে ৬-দফা দাবি প্রনয়ণ করেন। ঐ ছয়টি দফা যে আফ্রোএশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার মজলুম জনগণের মুক্তির পথে বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়াবে, ঐ ৬-দফা যে সিআইএ-র দলিল এবং ঐ দফাগুলো যে সে সময়ে বঙ্গোপসাগরে ঘুরে বেড়ানো মার্কিন সপ্তম নৌবহর থেকে প্রণীত সেটা সবার আগে জানতে পেরেছিলেন অফ্রোএশিয়া- ল্যাটিনআমেরিকার মেহনতি জনতার মুক্তি আন্দোলনের একমাত্র নেতা এই পূর্বপাকিস্তানের মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৬৭ সালে পল্টনের এক জনসভায় তিনি তা ঘোষণা করেন এবং কয়েকটি কাগজ নেড়ে নেড়ে বলেন, এই যে আমার নিকটে তাহার দলিলসহ প্রমাণ রহিয়াছে। তবে সেই দলিলসহ প্রমাণটিতে সিআইএ কী লিখেছিল সে বিষয়ে শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানি ঐ জনসভার পর কখনো আর টু শব্দটিও করেননি। তিনি ছাড়া আর কেউ সে দলিল কখনো দেখেননি। (হতে পারে তখনকার চিনপন্থি বাম নেতা মুহম্মদ তোয়াহা, আব্দুল হক, মতিন, আলাউদ্দিন, দেবেন শিকদার, আনোয়ার জাহিদ, কাজি জাফর , রাশেদ খান মেনন ও মাহবুবউল্লাহরা দলিলটি ভালভাবে পাঠ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন)। তবে ৬-দফা যে সিআইএ-র দলিল এবং শেখ মুজিব যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল - এটা চিন ও রুশ, উভয়পন্থী কমিউনিস্টরাই একযোগে প্রচার করতে থাকেন। তবে পাবলিকলি নয়। সেটা করতে গেলে জনগণের ছ্যাঁচা খাবার সমুহ সম্ভাবনা ছিল। কখনো সখনো তা বাস্তব রূপ নিতেও দেখা যেতো।
এর মধ্যে ১১-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়ে যায়। এদেশের প্রতিক্রিয়াশীল অশিক্ষিত চোয়াড় ও আত্মঘাতি জনগণ শেখ মুজিবকে তাদের একমাত্র নেতা ও আওয়ামি লিগকে তাদের স্বার্থরক্ষাকারী একমাত্র দল হিসাবে বি-পু-ল ভোটে জয়ী করে। বেকুব বাঙালি বুঝলোও না এত উৎসাহ উদ্দীপনা দেখিয়ে নিজেদের কি সর্বনাশইনা তারা করে ফেললো। কমিউনিস্টদের তখন খুব রমরমা। যত নেতা তত দল। যত দল ততোধিক উপদল।
এলো ৭-মার্চ। এখানেও মুজিব এক মহাব্লান্ডার করে ফেললেন। লোকজনকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে সুকৌশলে বাঙলার স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি উহ্য রেখে দিলেন।
তবে , “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”- বাক্যটি যে পাকিস্তান রক্ষার জন্যই তিনি কায়দা করে বলছিলেন, সেটা বেকুব বাঙালিরা বুঝতেই পারলো না। বুঝতে পারবেইবা কি করে? ওরা কি মার্ক্সবাদ সম্পর্কে কিছু জানতো? ডায়ালেকটিকাল ম্যাটেরিয়ালিজম পড়েছে? চেয়ারম্যান মাও-এর লাল বই বুক পকেটে নিয়ে ঘুরেছে? উধং ঈধঢ়রঃধষ ঘাড়ে বয়ে বেড়াবার ক্ষমতাই বা ছিল ক’ জনের? চড়ড়ৎ ষঁহমরপষধফ ইবহমধষরং!
এমতাবস্থায় মুজিব বাঙলাদেশের স্বাধীনতা না চেয়ে বরং পূর্ব বাঙলাকে পাকিস্তানের অধীনস্থ রাখতে চেয়েছিলেন বলে, বিশেষ করে সাত মার্চের ভাষণে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা না করায় বিক্ষুব্ধ ইয়াহিয়া ও টিক্কা খান মুজিবের কারণে পাকিস্তান টিকে যাচ্ছে দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন ও গোপনে ভুট্টোর সুবুদ্ধি ও সৎপরামর্শে বাঙলাদেশকে যে কোনও মূল্যে স্বাধীন করার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মুজিবের অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে অপারেশন সার্চলাইট নামক বাঙালি নিশ্চিহ্ন করার গণহত্যা কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
ভীতু বাঙালি তথা ভেতো বাঙালি তখন আর কি করবে, দেখলো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ঝাড়ের বাঁশ, ঝোপের লাঠি, হাতের কোচ আর বুকের সাহস নিয়ে ইয়াহিয়ার ঘাতক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘জয় বাঙলা’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পাহাড়ে জঙ্গলে মাঠে ময়দানে সড়কে নগরে ধানক্ষেতে বিলের জলে শুরু হলো রক্তের হোলি খেলা। গোমতী, কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপূত্রের পানি লাল হয়ে বইলো নয়টি মাস। সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্সে ৯৩,০০০ পাক সৈন্যের আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের চরম পরাজয় ও বাঙলাদেশের মহান বিজয় বাস্তবতার মুখ দেখতে পায়। শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে বাঙলাদেশ তার চিরআকাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভ করলো। ইয়াহিয়া, ভুট্টো পাকসেনা রিচার্ড নিক্সন হেনরি কিসিঞ্জার জামাতে ইসলাম গোলাম আজম ও কমরেড মাও সে তুঙ- এর সম্মিলিত স্বপ্নের সাফল্যঅর্জিত হলো। বাঙলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে গেল পাকিস্তানের নাম। লাল সবুজ পতাকার নিচে চিরতরে চাপা পড়ে গেল ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায?িকতার প্রতীক চাঁদতারা খচিত পাকিস্তানের পতাকা। মুছে যায় চব্বিশ বছরের নির্যাতন লুণ্ঠন ও বঞ্চনার ধারাবাহিকতা।
এটাই হলো গিয়ে যাকে বলে ইতিহাসের ভিতর থেকে তুলে আনা আসল ইতিহাস। বাহান্ন বছর ধরে চাষ করা ইতিহাসের আসল মুক্তো। মে মুক্তোয় কোনো ভেজাল নেই। জয় নির্ভেজাল ইতিহাস। জয় শেখ মুজিবের সেই সব বন্ধুরা, যারা ছবিতে ও টেলিভিশনে ছাড়া জীবনে শেখ মুজিবের চেহারাটুকু পর্যন্ত কখনো দেখেননি, কিন্তু তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য যে যে মাল-মেটেরিয়াল দরকার তার সবটুকুরই অক্লান্ত যোগানদার হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একবার সাধের পাকিস্তান ভাঙার জন্য শেখ মুজিবকে দায়ী করছেন, আবার বলছেন, শেখ মুজিব কখনোই বাঙলাদেশের স্বাধীনতা চাননি।
আমরা বলি, ভায়া যা বলার একটা বলুন। দুটো বললে তো হবে না। আমরা বেকুব-সেকুব মানুষ অতো প্যাঁচ কষে বললে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলবো। হয় বলুন, মুজিব স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, অথবা বলুন, মুজিব স্বাধীনতা চাননি। বলে দেন, ১৬ ডিসেম্বর বাঙলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আগে স্বাধীন ছিল, ঐদিন পরাধীন হয়েছে। ৯৩০০০ পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পন আসলে আসলে পাকিস্তানের বিজয়েরই প্রমাণ, পরাজয়ের নয়।
বঙ্গবন্ধু মুজিবের এতসব শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধুবান্ধব দেখে মনে হয় বঙ্গবন্ধু বড় আগ্যবান মানুষ ছিলেন!
আরও সংবাদ
[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত
[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত
[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র
[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
[১]রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসসহ নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান: ইকবাল সোবহান চৌধুরী

[১]সরকার ধৈর্য্য ধরলেও সন্ত্রাসীরা দেশের অনেক জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

[১]রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত

[১]আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় [২]সারাদেশে পুলিশের অনেক স্থাপনা আক্রান্ত

[১]সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোসহ ১১ দফা দাবি টিআইবি’র

[১]ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
